আপেল সিডার ভিনেগার - আপেল সিডার ভিনেগার খাওয়ার নিয়ম ও উপকারিতা

আপেল সিডার ভিনেগার খাওয়ার নিয়ম ও উপকারিতা সম্পর্কে অনেকেই জানে না। তাই অনেকেই আপেল সিডার ভিনেগার খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে জানতে চাই। বর্তমান সময়ে প্রায় ছেলে মেয়েরাই স্বাস্থ্য সচেতন। অতিরিক্ত ওজন কমানোর জন্য আপেল সিডার ভিনেগারের কোন বিকল্প নাই। তবে এ অবশ্যই আপেল সিডার ভিনেগার খাওয়ার নিয়ম ও উপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে থাকা প্রয়োজন।
আপেল সিডার ভিনেগার- আপেল সিডার ভিনেগার খাওয়ার নিয়ম ও উপকারিতা
শুধু স্বাস্থ্য সচেতন ব্যক্তিদের জন্যই না এটি অনেক রোগের প্রতিষেধক হিসাবে কাজ করে। এছাড়াও আপেল সিডের ভিনেগারের কিছু বৈশিষ্ট্য রয়েছে যা আমাদের ত্বকের জন্য খুব উপকারী। নিচে আপেল সিডার ভিনেগার খাওয়ার নিয়ম ও উপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো।

পেজ সূচিপত্রঃ আপেল সিডার ভিনেগার - আপেল সিডার ভিনেগার খাওয়ার নিয়ম ও উপকারিতা

আপেল সিডার ভিনেগার

আপেল সিডার ভিনেগার হল আপেল এর রস দিয়ে ভেজানো তৈরি ভিনেগারকে বলা হই। আপেল সিডার ভিনেগার শরীরের জন্য অনেক উপকারি। আপেলকে দুই বার গাঁজন প্রকিয়ায় বা পিষে এর থেকে রস বের করে আপেল সিডার ভিনেগার তৈরি করা হই। আপেল সিডার ভিনেগারে ৫-৬% অ্যাসেটিক এসিড আছে।
যা শরীরের জন্য ভালো। আরো রয়েছে অ্যান্টি-অক্সিডেন্ত এবং খনিজ-লবন ছাড়া আরও নানা উপকারি পদার্থ। যা আমাদের শরীরকে সুস্থ রাখতে সাহায্য করে । ত্বক ও চুলের যত্নতেও এতি একটি কার্যকরী উপাদান।

আপেল সিডার ভিনেগার সালাদ, মেরিনেট, ড্রেসিংস, ফুড প্রিজারভেটিভস ও চাটনিতে ব্যবহার করা হয়। প্রতি ১০০ গ্রাম আপেল সিডার ভিনেগার ২২ ক্যালোরি শক্তি তৈরি করে। আরও রয়েছে শর্করা ০.৯৩ গ্রাম, ক্যালসিয়াম ৭ মিলি গ্রাম, লৌহ ০.২০ মিলি গ্রাম, ম্যাগনেসিয়াম ৫ মিলি গ্রাম, পানি ৯৩.৮১ গ্রাম, ইত্যাদি।

আপেল সিডার ভিনেগার খাওয়ার নিয়ম ও উপকারিতা

ওজন কমাতে এখন অনেকেই আপেল সিডার ভিনেগার এর ওপর বেশি ভরসা করে থাকেন। স্বাস্থ্য নিয়ে চিন্তিত মানুষদের জন্য আপেল সিডার ভিনেগারের জনপ্রিয়তা রয়েছে । রক্তে শর্করা ও কোলেস্টেরলের মাত্রা স্বাভাবিক রাখতে এর কোন তুলনা নাই। সৌন্দর্য রক্ষাতেও এতি অনেক কাজে দেই। কিন্তু এটি অ্যাসিডক হওয়ার কারণে তা প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় রাখার জন্য কিছু নিয়ম মেনে চলা প্রয়োজন।
এতে এর ক্ষতিকর দিক গুলো থেকেও আমরা বাঁচতে পারব। আসুন আজকের এই আর্টিকেল থেকে আমরা, আপেল সিডার ভিনেগার খাওয়ার নিয়ম কি তা জেনে নিয়ে আমরা এর ব্যবহার সম্পর্কে সচেতন হই। তাছাড়াও , আপেল সিডার ভিনেগার খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে নিচে কিছু আলোচনা করা হয়েছে।

আপেল সিডার ভিনেগার খাওয়ার নিয়ম: খাওয়ার ২০-৩০ মিনিট আগে এক গ্লাস পানিতে ১/2 চামচ আপেল সিডার ভিনেগার মিশিয়ে খাওয়া। এতে রক্তে শর্করার পরিমাণ ঠিক থাকে। খাবার রান্নাতে এটি ব্যবহার করা ভালো। তাছাড়া সালাদে বা মেরিনেট করা খাবারে ব্যবহার করা যায়। ড্রেসিংস, ফুড প্রিজারভেটিভস ও চাটনিতেও এটির ব্যবহার অনেক রয়েছে ।

যাদের অনিয়মিত ঘুম হয় তারা এটি রাতে খাবেন না। ভালো পদ্ধতি হল রান্নার সময় খাবারে ব্যাবহার করা। আপেল সিডার ভিনেগার খাওয়ার শুরুতে কম পরিমাণে ব্যবহার করা উচিত।

যাদের বদহজমের সমস্যা আছে তারা এটি সকাল বেলা খেতে পারেন। সকালে আপেল সিডার ভিনেগার পানিতে মিশিয়ে খেলে গ্যাসের সমস্যা দূর হই। কিন্তু সকালে এটি খালি পেতে খেলে এর থেকে বের হওয়া গন্ধের কারণে অনেকের বমি বমি ভাব হতে পারে। সেক্ষেত্রে খাবার খাওয়ার পর খেতে পারেন।
ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য এই ভিনেগার অনেক কার্যকারী উপাদান। ডায়াবেটিস রোগীদের ক্ষেত্রে আপেল সিডার ভিনেগার শরীরে ইনসুলিন তৈরি করতে পারে না। ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্টের জন্য শরীরে রক্তে শর্করার লেভেল বৃদ্ধি পাই। এজন্য আপেল সিডার ভিনেগার খাবার খাওয়ার ৩০ মিনিট আগে এক গ্লাস পানিতে ১ চামচ মিশিয়ে খেলে রক্ততে শর্করার পরিমাণ ঠিক থাকে।

বেশি পরিমাণে এই ভিনেগার খেলে গলার ভিতর জ্বালা-পোড়া করতে পারে। দাঁতের এনামেল ক্ষয় হই জেতে পারে। মুখের ভিতরের অনেক সমস্যার দেখা দিতে পারে। আমাদের সরাসরি এই ভিনেগার খাওয়া ঠিক নই। পানিতে মিশিয়ে খাওয়া উচিত।

উপকারিতা: আপেল সিডার ভিনেগার শরীরের জন্য অনেক উপকারি। এটি হল একটি প্রদাহরোধী, অ্যান্টিসেপ্টিক, অ্যান্টি-গ্লাইসেমিক, প্রোবায়োটিক গুনের সংমিশ্রসরি। এটি নিয়মিত খাওয়ার মাধ্যমে শরীরের ওজন কমানো, রক্তে শর্করা, কোলেস্টেরল কমাতে, মুখের দুর্গন্ধ, এবং যে কোন ব্যথা কমাতে সাহায্য করে। শরীরের যে কোন ব্যাকটেরিয়া জনিত স্থান পরিষ্কার করে।

নখের ব্যাকটেরিয়া, চুলের উকুন, শরীরের যে কোন স্থানের আঁচলি, কানের ইনফেকশন ভালো হতে সাহায্য করে। ডায়াবেটিস রোগীদের রক্তে শর্করার লেভেল কম করে। যে সব মানুষের হৃদরোগ রয়েছে তাদের রক্তে কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করে। বর্তমান যুগে ক্যানসার দিন দিন বেড়েই চলছে। গবেষণাতে দেখা গেছে, আপেল সিডার ভিনেগারে ক্যানসার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা রয়েছে।

ওজন কমায়ঃ আমাদের জিবনে আমরা বেশিরভাগ সময়ই অস্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়ার মাধ্যমে, আমাদের শরীরে অতিরিক্ত ওজন বাড়িয়ে ফেলি। এবং পরে অতিরিক্ত ওজন কমানো প্রাই কঠিন চ্যালেঞ্জ হয়ে দাড়াই। আপেল সিডার ভিনেগার আমাদের শরীরের অতিরিক্ত ওজন কমাতে পারে। কারণ এটির ভিতরে রয়েছে অ্যান্টি-গ্লাইসেমিক

যা হজম শক্তিকে কম করে এবং শর্করাতে পরিণত করতে পারে, এটি অতিরিক্ত চর্বি পরিহার করে থাকে। তবে, অস্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়া থেকে অবশ্যই দূরে থাকতে হবে।

ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য: ডায়াবেটিস রোগীদের ক্ষেত্রে আপেল সিডার ভিনেগার শরীরে ইনসুলিন তৈরি করতে পারে না। ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্টের জন্য শরীরে রক্তে শর্করার লেভেল বৃদ্ধি পাই। আপেল সিডার ভিনেগার ডায়াবেটিস রোগীদের রক্তে শর্করার পরিমাণ নিয়ন্ত্রনে রাখতে সাহায্য করে। যা চিকিৎসাগত ভাবে প্রমাণিত।

কার্ডিয়াক স্বাস্থ্য এবং রক্তের কোলেস্টেরল মাত্রার জন্য: আপেল সিডার ভিনেগার আমাদের শরীরের রক্ততে ট্রাইগ্লিসারাইড এবং কোলেস্টেরল মাত্রা নিয়ন্ত্রণ রাখতে সাহায্য করে। এই দুটির মাত্রা বেরে যাওয়ার কারণে হার্টের রোগ ও মস্তিকের স্ট্রোক হয়ে থাকে। নিয়মিত আপেল সিডার ভিনেগার খাওয়া গেলে কার্ডিয়াক স্বাস্থ্যের উন্নতি করে।

এন্টিসেপ্টিক এবং জীবাণুনাশকের জন্য: আপেল সিডার ভিনেগার অ্যান্টিবায়োটিক হিসেবেও কাজ করে। এটি শরীরের ব্যাকটেরিয়া, ছত্রাক সংক্রমণ রোধ করতে, ক্ষত পরিস্কার করতে সাহায্য করে।

সৌন্দর্য বাড়াতে সাহায্য করেঃ আপেল সিডার ভিনেগার শরীরের যত্নতেও সাহায্য করে। এটি চুলের খুসকি পরিষ্কার করে, দাঁত সাদা করা, চেহারার সৌন্দর্য বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে। এটি একটি ঘরোয়া পদ্ধতি যা বহু বছর ধরে মানুষ এটির ব্যাবহার করে আসছে।

ওজন কমাতে আপেল সিডার ভিনেগার খাওয়ার নিয়ম

অতিরিক্ত ওজন আমাদের শরীরের জন্য ভালো না। অতিরিক্ত ওজন আমাদের শরীরে নানা রকম রোগের সৃষ্টি করে। এ জন্য আমাদেরকে নিজেদের শরীরের প্রতি যত্নশীল হওয়া উচিত।
ওজন কমানোর জন্য আপেল সিডার ভিনেগারের কোনো বিকল্প নাই। ওজন কমানোর জন্য প্রতি ১ গ্লাস পানিতে ১ চা-চামচ আপেল সিডার ভিনেগার মিশিয়ে খালি পেটে সকাল বেলাতে খাওয়া। এতে করে মেটাবোলিজম বৃদ্ধি হয় এবং ওজন কমতে শুরু করে। তবে ফ্যাটযুক্ত খাবার খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে।

তবে আপেল সিডার ভিনেগার বেশি পরিমাণে খাওয়া উচিত না। ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে ব্যবহার করতে পারেন।

আপেল সিডার ভিনেগার এর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া

আপেল সিডার ভিনেগারের যেমন উপকারি দিক আছে, ঠিক তেমনি এর ক্ষতিকর দিকও রয়েছে। চলুন যেনে নেওয়া যাক, আপেল সিডার ভিনেগার এর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া সম্পর্কে।

আপেল সিডার ভিনেগার আমাদের শরীরের ওজন কমাতে অনেক উপকারী। কিন্তু আমাদের শরীরে এটির পরিমাণ বেশি হলে নানা রকম ক্ষতি হতে পারে। আপেল সিডার ভিনেগার বেশি খাওয়ার ফলে দাঁত ক্ষয়, শরীরে পটাশিয়াম কম, বদহজম, পাকস্থলীর সমস্যা, ডায়রিয়া, হাড়ের ক্ষয় ইত্যাদি রোগ হতে পারে।
আপেল সিডার ভিনেগার রক্তে শর্করার পরিমাণ ঠিক রাখে যেমন, ঠিক তেমনই অতিরিক্ত পরিমাণ খাওয়া হলে খাবার হজম হতে অনেক সময় লাগে। এ থেকে হতে পারে খাবারের প্রতি ক্ষুধা না লাগা।

ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য এটি ব্যবহার করা অনেক বিপদজনক হতে পারে। কারণ ডায়াবেটিস রোগীদের ওষুধ খাওয়ার পাশাপাশি আপেল সিডার ভিনেগারের ব্যবহার উপকার না করে ক্ষতিই করবে বেশি। তাই এই ভিনেগার ব্যবহারে সতর্কতা বেশি খেয়াল রাখতে হবে।

এই ভিনেগার বাবহারের সঠিক পদ্ধতি জেনেই আমাদের এটি ব্যাবহার করা উচিত। তাই অবশ্যই এটি ব্যাবহারের পূর্বে ডাক্তারের পরামর্শ নিবেন। অথবা আপেল সিডার ভিনেগার এর সঠিক ব্যাবহার সম্পর্কে জেনে নিবেন ।

আপেল সিডার ভিনেগার দাম কত

আমাদের প্রতিদিনের জীবন-যাপনে অনেক ধরনের খাবার খেয়ে থাকি। যা আমাদের কাজ করার শক্তি ও শরীরকে সুস্থ রাখতে সাহায্য করে। আপেল সিডার ভিনেগার তার মধ্যে অন্যতম। আমাদের শরীরকে রোগ থেকে দূরে রাখে। ভিনেগার অনেক ধরনের হয়ে থাকে এবং এদের একেক ধরনের ভিনেগারের একেক রকম দাম হয়ে থাকে।

বাংলাদেশের আসে-পাসের দোকানে বা অনলাইনে এর দাম ঠিক কত হতে পারে তার একটি ধারণা দেওয়া হল। নিচে দেওয়া উল্লেখিত দাম অনুযায়ী আপনারা আপনাদের প্রয়োজন অনুযায়ী যে ধরনের আপেল সিডার ভিনেগার কিনতে চান তার ধারণা পেয়ে যাবেন।

  • Bragg Apple Cider Vinegar-(আপেল সিডার ভিনেগার) - 473ml = BDT 630 Tk / ৪৭৩মিলি.= ৬৩০ টাকা।
  • Karkuma Organic Apple Cider Vinegar - 480ml = 650 Tk
  • Discovery Organic Raw Unfiltered Apple Cider Vinegar with Mother -250ml = 400 Tk
  • Herman Apple Cider Vinegar with the Mother - 473ml = 185 Tk
  • Goodlife Apple Cider Vinegar with Mother = 190 Tk

শেষ কথাঃ আপেল সিডার ভিনেগার খাওয়ার নিয়ম ও উপকারিতা

আমাদের এই আর্টিকেলটিতে আপেল সিডার ভিনেগার খাওয়ার নিয়ম ও উপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। তাই অবশ্যই এই ভিনেগার খাওয়ার পূর্বে ভালোভাবে ধারণা নিয়ে এটি গ্রহণ করা উচিত। পরিমাণ মতো এটি গ্রহণ করলে কোন পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া থাকে না। তবে শরীরের প্রয়োজনের অতিরিক্ত এই ভিনেগার গ্রহণ করলে নানা ধরনের সমস্যার সম্মুখীন হতে পারেন। ধন্যবাদ ভালো থাকবেন।


এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

Dev Serp এর নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url